সুমন সরদার-এর কবিতা




তবুও না বৃথা যায়

একটি সিঁড়ির ধাপে পর্বতসমান রক্তমাখা দেহ

বঙ্গবন্ধু তাঁর নাম

নিচে ঊর্ধ্বমুখী বিশকোটি চোখ

       লাল হয়ে ওঠে যেন গেঁথেছে পেরেক বিষবর্শা!

অলৌকিক অন্ধকারে সব ছেয়ে যায়

রক্তরঙা অন্ধকারে আছড়ে আছড়ে পড়ে ঢেউ

              দশকোটি নরম পাঁজরে

পাঁজর ভাঙলো, কিন্তু দাঁড়িয়ে রইলো চোখবৃক্ষ

বৃক্ষ জানে, পাহাড় কাটলে ঠেকাতেই হবে ধস

পাহাড়ের কাছে যা শিখেছে বৃক্ষ

       তবু ধসে পড়ে কিছু ঝুরঝুরে নষ্টবালিমাটি

              যাতে কোনো ফসল ফলে না

              তাতে কিছু যায় না, আসে না।

 

মাটির মমতাভেজা বুকের রক্তের তাজা ছাপ

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আজও বত্রিশের সিঁড়িতে মৌন

অর্বাচীন শব্দহীন শব্দে বাংলাদেশ কাঁদে

মৌনতা দাঁড়ায় এসে বাঙালির পাশে

       মানুষজনম আজ বৃথা যায় বৃথা

তবু    রাতবুকে সন্ধ্যাতারা নামে এক মেয়ের মতন

       কোটি কোটি চোখবৃক্ষ যার চেতনার মারণাস্ত্র

 

এরকম মৌনতার পাশ ঘেঁষে যাদের বসতি

       শীতগরমের অভ্যন্তরে নিষুতি থাকে না তারা

এখন দেখছো! সেই চোখবৃক্ষ যত ছোট হোক

       একসঙ্গে চেপে ধরে সাপের শরীর...


বিষণ্ণ গভীরে একা

কি যেন হারিয়ে যায় বেদনার জলে মধ্যরাতে

প্রতিরাতে খুঁজে ফিরি স্বপ্নমাখা আঁধারে একাকী

কিছুলোক রাতঘুমে, কামুক রমণী চোরাঘুমে

শুধু ঘুমহীন আমি বিষণ্ণ গভীরে জেগে থাকি।

 

সখের জীবন খুঁজে ওরা সব নিজেকে হারায়

হারাতে হারাতে পরম্পরা গেছোভূত হয়ে যায়...


কেবল একা

এই মজা পথে একদিন ঢেউ তুলে গিয়েছিলো

                     বাউলের একতারা সুর

বাতাসে গেরুয়া ওড়ে, সুপ্ত থাকে অন্তরে সংঘাত

সংসার ত্যাগের মহিমায় আরেক সংসার

                     ধরতে না পারার অসুখ

নিয়ত বিষিয়ে তোলে মধ্যাহ্ন জানালা

 

পাওয়া না পাওয়ার হিসেবটা বড়ই অদৃশ্য থাকে

মুক্তির জন্যে যে যুদ্ধ তা কি দৃশ্যমান

দৃশ্যত অসংখ্য প্রতিযোগিতার দৌড় নিয়েই মানুষ ব্যস্ত

লুপ্তবর্ণ আঁধারের গভীরতা কোথাও কোথাও

 

যখন সকল পাখি একসঙ্গে নীড়ে ফেরে সন্ধ্যেবেলা

                         অথবা ফেরে না

যখন পশ্চিমে লালসূর্য টাইটানিকের মতো ডুবে যায়

                         অথবা ডোবে না

তখন অপাপপুষ্ট একজোড়া চোখ শুধু স্থির হয়, দেখে

প্রতিযোগীহীন প্রতিযোগিতার মাঠে

              বেড়ে ওঠে এক বৃক্ষ

                     নিভৃতে, কেবল একা ...


কেন জন্মেছিলো মানুষ

স্বর্গদস্যুতার আগ্রাসনে ঠিকানাহারার দল

বিশ্বনামী ঘোড়ায় চলেছে কুয়াশার ধোঁয়াপথে

                     ঠিকানা গড়ার স্বপ্নে

চরদখলের শুরু সম্ভবত সেই থেকে

শুধু চর কেন, নানান রঙের শিল্প, ঘাসবন

       সন্ধ্যার মৌনতা, এমন কি দ্বিধাহীন ইতিহাস

নুনমাটি কাঁদে, পাখিরাও বধ হয়

       তাই এ আকাশে আকাশ থাকে না।

 

এরপরও তরুণীর চোখে আমার ছায়ারা ঘোরে

       আবার আমারও চোখে তরুণীর চোখ

পর্বতের চড়া বুকে নিয়ে আশান্বিত

              ঘোরে না ঘোরায়

এমন সামর্থ্য কোথা থেকে পেল বলো তো যুবক?

 

তাই আশা জাগে, বেঁচে উঠি

       স্বর্গদস্যু নগ্ন ক’রে ক’রে

মাঝে মাঝে মনে হয়

       গাছে পাতা নেই, জমিতে ফসল

       কেন জন্মেছিলো মানুষ লোভের বশে!


প্রসবসময়

আজ শ্রাবণের দিন

বৃষ্টি এলো বলেই মা গাইলেন লালনের গান

নাকি মা লালন গাইলেন বলে বৃষ্টি এলো

                      বুঝতে পারি না!

 

বৃষ্টি এলে মায়ের সুদৃঢ় মায়াভরা মুখে আজো

              অদৃশ্য আঁধার নামে

কষ্টের আকাশ থেকে পাথরের ভর দিয়ে আসে

সুয়োরাণী দুয়োরাণী বুকঝিম শৈশবের গল্প

বুকের অন্দর নড়ে ওঠে, কাঁপে অল্পকল্পকাল

এরকম কষ্ট কষ্ট অনুভূতি ভাল লাগে না আমার

তবু দৃঢ় আমার মা, বিন্যস্ত শরীরে ছায়া গোনে

মা বলেন, দেখো, বৃষ্টি ধুয়ে দেবে সব যন্ত্রণার ক্ষত

সেই থেকে বৃষ্টি এলে আমি মায়ের কাছেই থাকি

                     লালনের গান শুনি

 

এরকম দিনে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, মায়ের পেছনে

              স্বয়ং ঈশ্বর দাঁড়িয়ে আছেন

মনে হলো আজ অনিবার্য সুন্দরের প্রসব সময়...

No comments

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.