লেখকদের সাহিত্য আড্ডা ও চড়ুইভাতি
বাংলাদেশে প্রায় সব পেশাজীবী মানুষেরই সংগঠিত রূপ আছে। আছে সাংগঠনিক
তৎপরতাও। কিন্তু কবি সাহিত্যিকদের সেটা নেই। না থাকাই স্বাভাবিক। কেননা কবি
সাহিত্যিকরা প্রতিষ্ঠানবিরোধী। প্রচলিত নিয়মকে ভেঙে নতুন কিছু সৃষ্টিই তাদের
ধ্যান-জ্ঞান। সেই চাওয়ার মধ্যেও থাকে নানা বৈচিত্র্যময়তা। কেউ কারো মতো ভাবে না।
কারো চিন্তার ধরনের সঙ্গে কারোটা পুরোপুরি মিলেও না। তবে একটি জায়গায় সবাই এক এবং
অভিন্ন; তা হচ্ছে, সত্য ও সুন্দরের নতুন পথ সৃষ্টির সাধনা। সেই পথের পথিক হিসেবে
কবি সাহিত্যিকরা তো একে অন্যের অবশ্যই সহযাত্রী। আর লেখকরা একত্রিত হওয়া মানেই শত
ফুল ফল আর বৃক্ষের সমারোহ। নানা প্রাণবন্ত আড্ডা। জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। সুন্দরের
বৈচিত্র্যময় ব্যাখ্যা। সৃষ্টি রহস্যের গভীর আলোচনা।
বরাবরের মতো এবারও ‘লেখক চড়ুইভাতি’র মাধ্যমে (বিশেষ করে ঢাকাস্থ) কবি
সাহিত্যিকরা একত্রিত হয়েছিল ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার গাজীপুরের মৌচাকে।
মনোরম শালবনের ভেতর ৯০ একর জমিতে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ
কেন্দ্রে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নানা রকমের কটেজ। পুকুর। পুকুর পারে নানা
জাতের ফুল। গাছের বেঞ্চ এবং কৃত্রিম আলোর হারিকেন। ফাঁকে ফাঁকে খোলা মাঠের সবুজ
ঘাস মাদুরের মতো বিছানো। যেন ডাকছে মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে।
ঢাকার অদূরে গাজীপুরের মৌচাকের এ ভেন্যুতে
অনুষ্ঠিত হওয়া লেখক চড়ুইভাতিকে আরও আলোকিত করেছে লেখকদের স্বামী-স্ত্রী সন্তানরা।
বিআরটিসির ৩টি ডাবল ডেকার ভর্তি লেখক ও তাদের
পরিবার জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর থেকেই বাচ্চাদের, বড়দের,
নারীদের বিভিন্ন ইভেন্টের খেলা, দুপুরের খাবার, র্যাফেল ড্র, পুরস্কার বিতরণী,
গান পরিবেশনা ও সাহিত্য আড্ডায় জমিয়ে রেখেছিল পুরোটা সময়। দলেদলে সারা বনে ছুটে
বেড়ানো সবার চোখে-মুখেই ছিল প্রশান্তির আলো। দেখতে দেখতেই যেন শালবনের পাতার ফাঁক
গলে ঢুকে পড়ল সন্ধ্যা। এখনই রাত্রির দখলে চলে যাবে শালবন। না চাইলেও সবাইকে ফিরতে
হচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যের জন্য। আবার একত্রিত হয়ে বিআরটিএর তিনটি ডাবল ডেকার বাসে
ওঠা। গাড়িতে বসে দলে দলে গান গাইতে গাইতে ঢাকার শাহবাগে এসে যে যার বাসার উদ্দেশে
বিদায় নেয়া।
সারা দিন বাঁধনহারা আনন্দ উপভোগ শেষে প্রায়
তিন শতাধিক কবি প্রাণের প্রাচুর্য নিয়ে ঢাকায় ফেরেন। আমাদের এ ব্যস্ততম যান্ত্রিক
যুগে এমন একটি চমৎকার এবং কষ্ঠসাধ্য আয়োজন সফল হয়েছে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে
তাদের মধ্যে কথাশিল্পী পারভেজ হোসেন, কবি অনিকেত শামীম, কবি রাসেল আশেকী এবং কবি
কুতুব হিলালীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।
অগ্রজদের মধ্যে কবি হাবীবুল্লাহ শিরাজী, কবি
বিমল গুহ, কবি সৈয়দ তারিক, কবি আসাদ মান্নান, পাপড়ি রহমানসহ অন্যদের উপস্থিতি
তরুণদের আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। তাদের উদযাপনও ছিল চোখে পড়ার মতো। সবাই যেন এই
দিনে একই কাতারে একই বয়সে মিশে গেছে। অসম্ভব সুন্দর এই মিলনমেলা শেষ হয়েছে সবার
হৃদয়ে আগামী বছর এমন একটি আয়জনের স্বপ্ন আঁকতে আঁকতে...।
No comments
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।