সাহিত্য দিগন্ত ঈদ সংখ্যা-২০২০ I ১০ কবির কবিতা I





স্বেচ্ছাচার বিবর্তীত হয়ে আজ প্রতিশোধে মত্ত
রানা জামান
সাংস্কৃতিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচার কাজ করে ঘুণাকারে
নগ্নতায় সামুদ্রিক লবনের কদাকার শৈল্পিকতা ধোয়াশার প্রজনন
জারজের আধিক্যের কালিমায় ওজনের স্তর ক্ষয়ে হ্রাসমান অক্সিজেন
ন্যাংটোতত্ত্ব প্রাদুর্ভাবে ধর্মতত্ত্ব ঢাকা পড়ে কুনোব্যাঙ অগ্নিকালে
কোলাব্যাঙ বাদুরের সাথে সখ্য গড়ে ম্যালা পঙ্গপাল শস্যক্ষেতে
স্বেচ্ছাচার পাল্লা দিয়ে পাশ্চাত্যের গোড় দিতে প্রাচ্যে সুমো কুস্তিগির
বৈভবের অহমিকা গুপ্তল্যাবে প্রতিপক্ষ বিধংসের মারণাস্ত্র আবিস্কারে অন্ধবুদ্ধ
আবিস্কার উন্মত্ততা জন্ম দেয় সর্বধংসী অণুজীব অকোষীয়
স্বেচ্ছাচার বিবর্তীত হয়ে আজ প্রতিশোধে মত্ত এক অণুজীব রূপে
মৃত্যুস্রোতে হাবুডুবু পরাশক্তি অর্থশক্তি তৈলশক্তি এমনকি চিন্তাশক্তি।


শাঁখের করাত
শফিক হাসান
ভালোবাসা কিংবা ভালো না বাসা লোকে যারে বিরহ কয়
কোনো পক্ষ থেকেই মুক্তি কি আছে পুতুল মানব-মানবীর!
মানব-মন ভাঙে কিংবা গড়ে শাঁখের করাতসদৃশ
দার্শনিক জানে ভালোবাসা নিরবচ্ছিন্ন থাকার মিথস্ক্রিয়া
বিদ্বান করাত বোঝে বিরহ জমে মেঘ হওয়ার আপদ!
বাঁশি বাজেনি বলে গাল ফোলায় যে বালিকা
কদমতলায় সুরের বিষয় ছড়ায় যে উদাসী তরুণ
বাউলের স্বনির্মিত কণ্ঠ-সুরের ঐকতান-দোলাচল
কী লুকানো তাতে প্রেম নাকি বিচ্ছেদ দহন!
আত্মপ্রতারক প্রেমিক পেয়ে সুখী নয়
দিকভ্রান্ত ইচ্ছারা না পেয়েও খুশি নয়
আঁকুপাকু মন কোন দিন বুঝতে শিখবে
কীসে তৃপ্তি, কীসে অতৃপ্তি তার
কেন সে ডোবে-ভাসে, মরে-মারে।
সেই বোধোদয় থেকেই মুক্তি প্রেমের
নিরাপদ আশ্রয়ে যাবে ভালোবাসা
জুড়োবে প্রেমিক-মনের বিরহ-জ্বালা!
তবু থেকে যায় ঢের কথা
প্রেম-বিরহের সমীকরণ
মিলিয়ে দেয় সহজে কোন সে অবতার!
নির্বোধই জানে প্রেমের মূল্য, বিরহের নোনাস্বাদ
বেদনার গায়ে রকমারি রঙের বিচ্ছেদ চড়িয়ে
নামকরণ করে প্রকৃত প্রেম কোন সে ভাবুক!


ভুল পথে একদল শেয়াল
প্রমথ রায়
রাতের শেয়ালেরা একত্রে ডেকে ওঠে
আমাকে অপহরণ করতে চায়,
আমি সওদাগর হয়ে উঠি
টাকার পোটলা বের করি
তারপর দাম হাঁকি, তিনশ পঞ্চাশ, চারশ
তারা পাঁচশর নিচে আসে না;
আমার প্রতারক চোখ জ্বলে ওঠে
আমি একে একে নস্ট করি
এক রাতে তাদের সব অর্জন।


নির্জন পর্ব
জাহাঙ্গীর ডালিম
ভালোবাসি তার চেয়ে বেশি
যতটা বাসলে ভালো পরিপূর্ণ নিঃস্ব হওয়া যায়।

কেন যে জোছনা ওঠে, এই চরাচরে মেলে দেয়
আকাশ তার চন্দ্রচূড় শাড়ি
কেন যে অমল আলোর ঢেউ এসে খেলা করে
নারিকেলের পাতায় ?

আমার একটা বাড়ি আছে-পাখির বাড়ি
আমার একটা ঘর আছে-অসীম আকাশ।


মজুরে
আঃ আজিজ
মানুষের মাঝে মানুষ খুজে যদি
তার মাঝে মানুষত্ব পাওয়া যায়
সে মানুষকে কষ্ট দিলে।
দাতা ধ্বংস হয়ে যায়।


যে মনের বন্ধন বেতের বাধঁন হয়
না পুড়িলে। অনেক দিন সয়ে যায়
স্বার্থ অম্ভেষী মনের বাধঁ বালুর মত
চিক চিক করে জ্বলে ধুয়ে-ক্ষয়ে যায়।


পরাধীন যদিও অধীন বটে
তাই বলে নয়তো কৃতদাস
কথায় কাজে বুঝিয়ে দেয়া
তোর নেই স্বাভাবিক অবকাশ।


মাটি ফাটা রোদ তুমি ঘরে বসে
প্রখর তাপে দিনমজুরে কেমনে
রৌদ্র স্নানে কথায় মুচকি হাসে।


কষ্ট সে তো কষ্ট কারুর কম নয়
নিজের কষ্টে পরকে বিবেচনা কর
দেখবে মনে মানবতা কথা কয়।
মানুষকে মানুষের মতো দেখো
যদি মানুষত্বের মানুষ হতে হয়।
)
https://mail.google.com/mail/u/2/images/cleardot.gif
https://mail.google.com/mail/u/2/images/cleardot.gif


ঘুড়ি
রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
নাটাই সুতো নাটাই সুতো
আকাশ জুড়ে ঘুড়ি।
শূন্যর বুকে নীলের মাঝে
রঙের ছড়াছড়ি।
অলস দুপুর অঁচল জুড়ে
উড়ছে ঘুড়ির ঝাক।
লেজগুলো নাড়ছে বেশ
একেবারে ঠিকঠাক।
হরেক বাহার হরেক রকম
স্বতন্ত্র তাদের সাজ।
বাক্স ঘুড়ি চিল ঘুড়ি
নানান কারুকাজ।
বাতাস যখন উঠলো ছুটে
ঘুড়িরা ছুটলো ধায়।
রঙবেরঙের ঘুড়ির সাজ
জাঁকাল দেখতে হয়।
খোকা টানে ঘুড়ির সুতো
বাতাস বুঝে বুঝে।
কেটে গেলে পালাবে ছুটে
পাবে না আর খুঁজে।
তাইতো খোকা দক্ষ হাতে
সুতো ধরেছে টেনে।
কেটে গেলে যাবে হারিয়ে
অজানা অচিনে।


অনুভবের পেয়ালা
আয়েশা মুন্নি
অনুশাসনের নিপুণ কারুকলা
অনুরণন করে যায়
রীতিনীতির অনন্য বেষ্টনীতে
আলোতে আলেয়া দেখি
আঁচলে ঢাকি শুভ্র সকাল
আড়ালে রাখি নিজেকে... দল
কিন্তু কেন,কেন এ প্রাণপাখিটা 
ডানা ঝাপটায় বন্দি খাঁচায়?
 তবে কী তুমি এসেছিলে..?
আমিও তো নিঃশব্দ পায়ে
তোমার প্রতীক্ষায় হেঁটে হেঁটে
এসেছিলাম শিউলি তলায়

প্রেমসুধাপূর্ণ প্রেমিক তুমি
আমার তৃষিত হৃদয়
দাও,অঞ্জলী ভরে 
ভালোবাসা তুলে নিতে দাও।

যত বাঁধা, যত ভয়
যত দ্বিধা, শংকা
নিন্দার ঝড়
পেছনে ফেলে চলে যাবো
খুলে যাবো অদৃশ্য শিকল।
তিক্ত অভিজ্ঞতা
বিষণ্ন অতীত
দোদুল্য বর্তমান
পাপ,তাপ ভেসে যাক।

দুঃসাহসের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে
দ্বিধা সংকোচ ভুলে
চলো- প্রেম ঢালি, 
অনুভবের পেয়ালায়।


ঈদের ছড়া 
আলমগীর কবির 
ঈদ মানে কি খুকি তোমার
শুধু নিজের খুশি

ঈদের দিনে সবাই সমান
বাদ যাবে মৌটুসি?

খেলার মাঠে মৌটুসিকে 
খেলতে সাথে নিয়ে

এবার ঈদে খোঁজ নিয়েছো 
তার বাসাতে গিয়ে ?

সে পেলো কি নতুন জামা 
কিংবা চুলের ফিতা

তোমার কিছু খুশি দিয়ে 
বানাও তাকে মিতা।


কিছুই নেই
অনুশ্রী রায়
তোর প্রেম বিভক্ত নারকেল পাতা
অভিমানী মন ভিজে আমসী
চাঁদ ভালোবাসা তোর প্রতি রাতে
অল্প অল্প নিঃশেষ হয়,
পূর্ণতা থেকে শূন্যতা পায় জীবন

আমার চাহনিতে মীরা ফুটে আছে
রাধা চুড়া ,কৃষ্ণ চূড়ায় হেলে
আমার বুক ঝরাপাতা শুন্য ডাল
অবহেলায় অভিমানী
পাখির ডানায় রেখেছি প্রেম
 শীতল পাটির মতো মায়ায় জড়িয়ে


শুধু তুমিময়
আদেল পারভেজ
শুধু তুমিময়-
এই সময়, দিন
মধ্য দুপুর, রাঙা গোধুলি
এই জীবন, হাতের রেখায়, আঙুলের ডগায়
খুনসুটি আর তোমার মৌনতায়
 সব কিছুই–
তুমিময়, শুধু তুমি, শুধু তুমিময়

আমার চিন্তা চেতনায়
সকল ভাবনা আর বাস্তবতায়
যেই আকাশটা আছে সব কিছুই–
তুমিময়, শুধু তুমি, শুধুতুমি ময়

ঐ আকাশে ভেসে থাকা মেঘ
বৃষ্টি ভেজা কাকের পালক
কাদা মাখা মেঠো পথে দুরন্ত শৈশব
ঝড় হাওয়া উড়ন্ত সঙ্গীবিহীন-
নীল পলিথিন, বিসর্জনে যাওয়া আবেগ
সব কিছুই–
তুমিময়, শুধু তুমি, শুধু তুমিময়




1 comment:

  1. কবি শফিক হাসানকে ধন্যবাদ। ঈদের সকালে অনবদ্য কবিতা পাঠের অনুভূতি সত্যই অসাধারণ। ভবিষ্যতেও একই ধরনের কাব্য প্রসব করে বাংলা কবিতাকে তিনি সমৃদ্ধ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করি।

    ReplyDelete

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.