ত্রিশাখ জলদাসের কবিতাগুচ্ছ
সম্পর্ক
◘
◘
এতই ভঙ্গুর মানুষের সম্পর্কের এই ছায়াপথ,
টুপ করে ডুবে গেলে একখণ্ড পাথর,
তরঙ্গিত জলের শরীরে জমে যায় হিম।
টুপ করে ডুবে গেলে একখণ্ড পাথর,
তরঙ্গিত জলের শরীরে জমে যায় হিম।
এতই
ভঙ্গুর এই মনস্তাপ, এই অস্তিত্ব সংকট,
মানুষের নিঃশ্বাসে জমে থাকে ঋণ,
দীর্ঘ পথ হেঁটে যায় লক্ষ্যহীন পথে।
মানুষের নিঃশ্বাসে জমে থাকে ঋণ,
দীর্ঘ পথ হেঁটে যায় লক্ষ্যহীন পথে।
এতই
ভঙ্গুর আজ,
ভঙ্গুর
ভঙ্গুর
ভঙ্গুর
ভঙ্গুর
ভঙ্গুর
ভঙ্গুর
শব্দহীন
শব্দে বাজে ক্রমাগত বিপন্ন বিলাপ!
সংবিধিবদ্ধ
স্বপ্নে
◘
ও
চাঁদ পূর্ণতা দাও, নিয়ে যাও শরবিদ্ধ রাতের আঁধারে,
সহস্রের রাজনটি নৃত্য করে সঙ্গোপনে ধ্যানের মন্দিরে।
সহস্রের রাজনটি নৃত্য করে সঙ্গোপনে ধ্যানের মন্দিরে।
কামের
চৌষট্টি কলায় যদি ভাঙে ধ্যান, তবে কে রবে এই
ছায়া মগ্নে, কে যে নেবে অমৃতের স্বাদ। শরীরের পিঁপড়ারা
এসে খেয়ে নিলে গুড়, শিশ্নের অঙ্গারে আহা পুড়ে যাবে শ্বাস।
ছায়া মগ্নে, কে যে নেবে অমৃতের স্বাদ। শরীরের পিঁপড়ারা
এসে খেয়ে নিলে গুড়, শিশ্নের অঙ্গারে আহা পুড়ে যাবে শ্বাস।
অপূর্ণ
সঙ্গমে যদি ডুবে যায় রাত, স;মেহনে জেগে থাকে
নগ্ন এক চাঁদ।
কফি শপে
◘
◘
আমরা মুখোমুখি কফি শপে।
আমরা আঙুলে ছুঁয়ে দেই,
আমরা ঠোঁটে ডুব দেই,
আহা, আমাদের ভালোবাসা জ্যোতির্ময়!
চারিদিকে কী নিশ্চুপ!
আমরা ঈশ্বর।
আমরা আঙুলে ছুঁয়ে দেই,
আমরা ঠোঁটে ডুব দেই,
আহা, আমাদের ভালোবাসা জ্যোতির্ময়!
চারিদিকে কী নিশ্চুপ!
আমরা ঈশ্বর।
তুমি
ব্যাংক নোট গুঁজে রাখো রাজসিক।
আমি চুরুটে ধোঁয়া ছাড়ি রাজসিক।
আমরা বাতাসে ছুড়ে দেই কথা,
একটি ব্ল্যাক কফি একটি লাত্তে।
আমি চুরুটে ধোঁয়া ছাড়ি রাজসিক।
আমরা বাতাসে ছুড়ে দেই কথা,
একটি ব্ল্যাক কফি একটি লাত্তে।
আমাদের
ভালোবাসা ঠোকাঠুকি,
আমরা মননে আলাদা।
আমরা আবেগতুঙ্গ,
আমরা মগজে আলাদা।
আমরা মননে আলাদা।
আমরা আবেগতুঙ্গ,
আমরা মগজে আলাদা।
আহা,
আমাদের ভালোবাসা জ্যোতির্ময়!
চারিদিক কী নিশ্চুপ!
চারিদিক কী নিশ্চুপ!
টেবিলে
দুটি মগ…
একটিতে
ব্ল্যাক কফি বাকিটা লাত্তে।
অগ্রন্থিত
গান
◘
মায়ামুখ
দেখে
ওড়ে পাখি,
ওড়ে চাঁদ,
বিহ্বলতা—
মাটি ও পাহাড়।
আর নক্ষত্রের সম্ভোগে
জাগে রাত্রি
ছায়াঘুম—
ফুল ও আকাশ।
ওড়ে পাখি,
ওড়ে চাঁদ,
বিহ্বলতা—
মাটি ও পাহাড়।
আর নক্ষত্রের সম্ভোগে
জাগে রাত্রি
ছায়াঘুম—
ফুল ও আকাশ।
প্রণয়ের
প্রতিটি তাপ
ভালোবাসা নয়
এই জেনে
কিছু কিছু
বিবর্ণ পাতা
উড়ে যায়
পালাবদলের রাতে।
প্রতিটি তাপ
ভালোবাসা নয়
এই জেনে
কিছু কিছু
বিবর্ণ পাতা
উড়ে যায়
পালাবদলের রাতে।
ও
আমার বিষণ্ন মেঘ
ফিরে যাও
একা একা…
তিতাসের দীর্ঘ শ্বাসে
পড়ে থাক
পালিত রোদ্দুর।
ফিরে যাও
একা একা…
তিতাসের দীর্ঘ শ্বাসে
পড়ে থাক
পালিত রোদ্দুর।
ভ্রম
◘
◘
রাত একটার ট্রেন এলে আমরা পরস্পর
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আর স্টেশনটি
খণ্ডিত নিদ্রার ভেতর নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়।
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আর স্টেশনটি
খণ্ডিত নিদ্রার ভেতর নিজেকে উন্মুক্ত করে দেয়।
তার
স্তন যুগলে
ক্রিয়াশীল শিল্পের মতো
দ্রুতলয়ে ছড়িয়ে যায় আলো।
ক্রিয়াশীল শিল্পের মতো
দ্রুতলয়ে ছড়িয়ে যায় আলো।
বস্তুত
আমরা সমুদ্রকে সবুজ দেখতে চাই
এবং মাছকে ভ্রমণরত বৃক্ষ মনে করি।
এবং মাছকে ভ্রমণরত বৃক্ষ মনে করি।
আনত
গীত
◘
শব্দ
ঘুরে ঘুরে ফিরে যাচ্ছে
আর হাতের উপর খেলা করছে রোদ্দুর।
আর হাতের উপর খেলা করছে রোদ্দুর।
ও আমার
বিষ্ণুপ্রিয়া
বহুদিন হয়নি যাওয়া
নদীর ওপারে
বহুদিন হয়নি যাওয়া
নদীর ওপারে
নদীর
ওপারে
কৃষ্ণ অন্ধকার—পতিত জীবন—
ক্ষয়ে যাওয়া জলস্রোত—পূর্ণ অন্ধ চাঁদ।
কৃষ্ণ অন্ধকার—পতিত জীবন—
ক্ষয়ে যাওয়া জলস্রোত—পূর্ণ অন্ধ চাঁদ।
আমি
একটি নগ্ন কবিতায় শুয়ে আছি
আর স্নানঘর থেকে
ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে রাধা।
আর স্নানঘর থেকে
ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে রাধা।
আত্মহত্যার
গান
◘
পাতা
ঝরার পর দেখি
একটি অপূর্ণ বৃক্ষ
নিঃসঙ্গতার দিকে ঝুঁকে আছে আর
তার চারদিকে ডুবে যাচ্ছে ঈশ্বর।
একটি অপূর্ণ বৃক্ষ
নিঃসঙ্গতার দিকে ঝুঁকে আছে আর
তার চারদিকে ডুবে যাচ্ছে ঈশ্বর।
মূলত
অন্ধকার নেমে আসলে
ঈশ্বর পূর্ণ চাঁদ নিয়ে খেলা করে
তখন
শূন্যতাকে ছুঁয়ে থাকে জন্মান্ধ শূন্যতা—
ঈশ্বর পূর্ণ চাঁদ নিয়ে খেলা করে
তখন
শূন্যতাকে ছুঁয়ে থাকে জন্মান্ধ শূন্যতা—
বস্তুত
শূন্যতা কেবলই একটি সংখ্যা,
তাকে গুনে যাচ্ছি প্রবাহিত শূন্যতায়।
তাকে গুনে যাচ্ছি প্রবাহিত শূন্যতায়।
ঘর
◘
ঘরের
ভেতর ঘর খুলে বসে আছি।
সদর
অন্দর আলাদা করে খোলা—
জাহ্নবীর পাশের ঘরে খেলা করছে ঋতুকামিনী,
প্রদীপ জ্বালানো আকাশ, তুলসীপাতা,
মায়া মাখা হাত, সন্ধ্যার আরতি।
জাহ্নবীর পাশের ঘরে খেলা করছে ঋতুকামিনী,
প্রদীপ জ্বালানো আকাশ, তুলসীপাতা,
মায়া মাখা হাত, সন্ধ্যার আরতি।
আমি
ছবি এঁকে যাচ্ছি…
আঁকছি গুহামুখ, নিচু জমিন, বিরুদ্ধ শিবির।
আঁকছি গুহামুখ, নিচু জমিন, বিরুদ্ধ শিবির।
কার
সাথে যুদ্ধ হচ্ছে জানি না—
নাগচিনি নদীর পাশে শুয়ে আছে চৈত্রের উঠোন।
নাগচিনি নদীর পাশে শুয়ে আছে চৈত্রের উঠোন।
অপেক্ষা
◘
জলে
ডুবে আছি…
একটি
দুর্বিনীত রাত অপেক্ষা করছে নিকটে।
খিলানের
ওপাশে হলুদ পাপড়ির ফুল,
পাহাড়ের গ্রীবা থেকে তুলে আনি পাখি।
পাহাড়ের গ্রীবা থেকে তুলে আনি পাখি।
ফের
ফিরে যাই—বসি আগুনের পাশে,
আড়াআড়ি দেখি;
ফেলে আসা ছায়াপথ পুড়ে যাচ্ছে দূরে।
আড়াআড়ি দেখি;
ফেলে আসা ছায়াপথ পুড়ে যাচ্ছে দূরে।
ছিন্নপাঠ
◘
ইচ্ছে
করে না দূরে কোথাও দাঁড়াই।
হিম
ভাঙার শব্দ শুনে
ধুলো থেকে উঠে আসছে সাপ।
হাওয়ার ভেতর কাঁপছে জল
দৃশ্যের আড়ালে ছড়িয়ে পড়ছে রং…
ধুলো থেকে উঠে আসছে সাপ।
হাওয়ার ভেতর কাঁপছে জল
দৃশ্যের আড়ালে ছড়িয়ে পড়ছে রং…
কে
আমাকে নদীতীরে যেতে বলে!
ভেতরে
অরণ্য নেই
ধ্বনি ভেঙে উঠে আসে স্বর।
ধ্বনি ভেঙে উঠে আসে স্বর।
প্রণয়
একটি ক্ষিপ্ত ঘোড়সওয়ার,
উল্টে যাচ্ছে দ্বিতীয় চাঁদের পিঠে।
উল্টে যাচ্ছে দ্বিতীয় চাঁদের পিঠে।
অনুক্রম
◘
প্রতি
রাতে বাড়িগুলো জায়গা বদল করে,
নীল বাড়িটা লাল বাড়ির ভেতর
আর সাদা বাড়িটা সবুজে…
নীল বাড়িটা লাল বাড়ির ভেতর
আর সাদা বাড়িটা সবুজে…
প্রতি
রাতে বাড়িগুলো ভাসমান নৌকো—
তাদের শরীর থেকে প্রবাহিত প্রতিটি জলকণা
এক একটি শিশুফুল।
তাদের শরীর থেকে প্রবাহিত প্রতিটি জলকণা
এক একটি শিশুফুল।
প্রতি
রাতে বাড়িগুলো ঘুমনদী,
শুয়ে থাকে অগ্রহায়ণের বারান্দার নিচে।
শুয়ে থাকে অগ্রহায়ণের বারান্দার নিচে।
ধানগীত
◘
সূচনা
ও নাগর তুই কেন গেলি মরে, নিশুতি রাতের মধু
জমে আছে চাকে, উনুনে আমার চড়ে না হাঁড়ি।
জমে আছে চাকে, উনুনে আমার চড়ে না হাঁড়ি।
কতিপয়
গীতবাদ্য পলকে বাজিলে,
আমার শিশ্নে নাচে আমলকী হরীতকী।
আমার শিশ্নে নাচে আমলকী হরীতকী।
বিস্তার
হিসাবের
খাতায় ভীষণ কাটাকাটি,
কী যে ভ্রান্তি!
জোড়ে জোড়ে কোনো দিন মেলেনি বেজোড়…
কী যে ভ্রান্তি!
জোড়ে জোড়ে কোনো দিন মেলেনি বেজোড়…
ওগো
মেয়ে শ্রাবন্তিনী,
তোর গতরের ওমে আমি মেলাব হিসাব।
তোর গতরের ওমে আমি মেলাব হিসাব।
বিলাপ
নীল
তাপ জমে আছে শরীরের খাঁজে,
ওমের উত্তাপে আজ গলে যাক মোম—
নিশীথে এসো তুমি মধু-ফুল্ল বনে,
নাগরের সব সুখ বিকাবো টাকায়।
ওমের উত্তাপে আজ গলে যাক মোম—
নিশীথে এসো তুমি মধু-ফুল্ল বনে,
নাগরের সব সুখ বিকাবো টাকায়।
বিনাশ
এইসব
দৃশ্যচিত্র ধান-চালে মাপি,
ধানের চাতালে আজ শুয়ে থাকে পাখি।
রতিস্রোত প্রবাহিত ধানের শরীরে,
প্রতিটি ধানই আজ হয়েছে পোয়াতি।
ধানের চাতালে আজ শুয়ে থাকে পাখি।
রতিস্রোত প্রবাহিত ধানের শরীরে,
প্রতিটি ধানই আজ হয়েছে পোয়াতি।
No comments
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।