কবি শিল্পী মাহমুদার নির্বাচিত ৫টি কবিতা
[১]
জীবনের
পেইন্টিং
❑
জীবন তো একটা পেইন্টিং
নিখুঁত ভাবে এঁকে চলেছি,
এর শেষ কোথায় না ভেবেই অজস্র স্বপ্ন দেখেছি।
প্রথম আঁকা শিখি তোমাকে
ভালবেসে
ছোট্ট ছোট্ট পায়ে কাছে আসা
আর গূঢ় গূঢ় স্পর্শ পাওয়া,
সে এক অন্য রকম অনুভূতিতে
নিজেই হারিয়ে যাওয়া।
জানো এত টুকুর পরিবর্তন আমার
অনুভূতির হয়নি তোমাকে নিয়ে-
বাকীটা সময় যাবে এভাবেই
ভালবাসা দিয়ে
তোমাকে দেখলে আমি চারপাশ
ভুলে যায়
তোমার কাছে আশায় আমি
বাকরুদ্ধ নিজেকে পাই।
এ শুধু আমার ভালবাসা
কাছে আসা
তোমার হাসি দেখে কাটিয়ে দিতে
পারি নির্ঘুম রাত
শুধু ছুয়ে থাকবে তোমার দুটি
হাত।
জীবনের অবারিত হেটে চলার পথে
নীল নীল জলে নিমগ্নতায়ও তুমি
থেকো সাথে
আত্মমগ্ন কুয়াশার মোহ ছিড়ে
দেখবো তোমায়
সাহসে শোভিত মাস্তুল রচিত
জীবনের পেইন্টিং আঁকতে দিও আমায়।
[২]
ক্লান্তহীন
শ্রান্ত অনুরাগ
❑
দুঃখ কী ?
জীবনের দুরন্ত সব ভুল।
সুখ তবে ?
মুক্ত আকাশ ,ফুটন্ত ফুল।
দুঃখ সুখের পরের অধ্যায় কি পাঠে?
এসবের সংজ্ঞা শিখেই জীবন
কাটে।
কেমন আছেন?
ভাল আছি । কিন্তু বাক্যটি
ভেজাল,
মুলত কেউই ভালো নেই আজকাল।
প্রত্যেকের অন্তরে জালা মনের
তাপে জ্বলে,
তবুও অভ্যাসের মতো ভালো আছি
বলে।
কিছু কি ভালো লেগেছে ?
হুম । চারপাশে অজস্র
ভালোলাগার ওম
দিনক্ষন জানা নেই তবে হবে
হয়তো শনি কিংবা সোম।
কতক্ষন স্থায়ী ছিলো ?
যতক্ষন চোখের সামনে ঝুলছিলো,
অন্ধকার থেকে বের হওয়া ছোট
আলো।
কে তারা ? কেমন?
কেউ মানুষ, কেউ বৃক্ষলতা
কিছু ভাব আর কিছু বস্তুর
আস্ফালন।
কেন ভাল লাগে?
এই যে ছোট ছোট মুগ্ধ
উন্মাদনা,
মিনিট বুঝে তাকে অনুভূতির
স্পর্শে আনা
অজস্র ভুল করেও তবুও আল্লাদী
জাগে
বেঁচে থাকা
ক্লান্তিহীন শ্রান্ত অনুরাগে
[৩]
অযথাই
বিনোদন
❑
আমি যে ভাল নেই জানো !
এটা নিকষ রাতের কালো
সুর্য প্রেমিক আমায় ভালবেসে
ডাকে আলো,
দিন রাত একই ভাবে যাই আসি,
তখনও বাজে দুরে বাঁশি।
ধন্য জয়ন্ত জীবন, আমি ধন্য
বলি তোরে
জানিতো
ধন্যবাদের অগ্রভাগের বিনয়
সুরে
চোখ তো দেখেনা সাদাকালো হিয়া,
কতটা দেখা যায় চর্মচোক্ষু
দিয়া।
যথা
এখানে ওখানে অবিরাম ছুটি,
হোচট খাই দৌড়াই সাক্ষী পা
দুটি।
মরে যাচ্ছি অযথাই বৃথা
বিনোদনে
সকালে-বিকালে মরি মরা গ্লানি
টেনে,
জীবন
কালের কোলে মরণ, আলোর নামই
জীবন,
কালো আঁধারে আলোর মিছিল হোক
দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাও, যে
যাই বলুক।
অতবড়
দীর্ঘশ্বাস বুকের নিঃশ্বাস
নিয়ে
মেলে দিওনা যেন দুহাতে
ভালবাসা দিয়ে
[৪]
এই
আমি
❑
আমি কে?
আমি গল্পের মহাসমুদ্র,
সুন্দর গল্পময় আমার জীবন।
অসংখ্য চরিত্র আমার,
অনেক বিভাজন।
আমার সকাল কী ?
সোনালি রোদ্র ভরা স্নিগ্ধ
আকাশ,
পাখির কলকাকলীতে মুগ্ধ নয়ন।
আর যান্ত্রিক জগত চলা শুরু,
যেখানে বুক কাপে দুরু দুরু॥
আমার দুপুর কী?
শব্দের কথামালা, ছন্দের
চুলায়
আমার অনুভূতির রান্না করা
ব্যাঞ্জন।
আমার কাছ থেকে ভালবাসা দুরে
থাকা।
আমার বিকাল কি ?
সূর্য হেলে পড়া , আমাকে ছেড়ে
পাখি চলে যাওয়া।
আমার রাত কী ?
অন্ধকারে নির্জনে ভাবা,
চন্দ্র দেখা , জোছনার সাথে
একান্তে কথা বলা,
নিজের অজান্তে স্বপ্নরা ভিড়
করা।
মনে আশা জাগা 'পাবো তাকে'!
আর চোখে তখন স্বপ্ন ছোঁয়া জল
থাকে
আমার বুকে কী?
প্রত্যাশা সুশীতল, শুকতারা
ভেজা রাত,
মনগড়া ক্যানভাস। যেখানে আঁকি
ভালোবাসার না পাওয়া ছবি বাকি
কাউকে ভালো লেগেছে কি?
হুম, অজস্র ভালোবাসি তাকে-
জানিনা, সে কতটুকু মনে রাখে!
দেখা হয়েছিল কী?
হা, কিছু ভাব কিছু ভালোবাসার
আস্ফালন
কেন ভালোলাগে?
ওই যে ছোট ছোট মুগ্ধ
উন্মাদনা,
ক্লান্তিহীন শ্রান্ত অনুরাগে
সে তো সব
সময় আমার ভাবনায় থাকে।
কবিতা তবে?
আমার প্রেম, তার আবেগী
স্বপ্ন,
বেঁধে রাখা সরল বিশ্বাস,
ভালো লাগার মুহুর্তে কবিতা হয় যেন ন্যায্য
বিশ্বাস
'এই আমি'
[৫]
হোক
স্পর্শ।
❑
হোক স্পর্শ
বাইরে ঝরুক বর্ষণের বর্ষ
উত্তপ্ত আঙিনায় ভিজিয়ে করুক ভেজা পথ,
চোখের কোণে চেতনার জলন্ত
উত্তাল উৎপাত।
মনের কোণে নীল মেঘরঙের ঘনঘটা
চিহ্নে দিচ্ছে নাড়া,
বিবর্ণ ইচ্ছেরা আকাশ ছোঁয়া ভালবাসার অনুভূতির পাড়া।
জানি নিজের বর্ধিতাংশ আধুনিক
মাত্রা,
বিংশ শতাব্দীর হৃদয় আঁকড়ে তোমার আমার যাত্রা,
বিধ্বস্ত বিবেক অধীর পাতাল
খুড়ে পাবে প্রশস্ত আত্মা।
নির্জনে জীবন বিলানো তোমার অঙ্গীকার,
মায়ার প্রতাপে কেপে তারুণ্য
ইতিহাস নির্বিকার।
সূর্যে ফোটা তোমার ঐ বাকরুদ্ধ মুখমণ্ডল,
আমার সম্মুখে মাটিতে নামানো
প্রেমের শিহরণ।
অক্লান্ত দিশাহীন গোপনে কথোপকথনে
নিস্কন্ঠকে যে আয়ু বাতাসে
মিশে নি:শ্বাস গুনে।
হোক স্পর্শ ,জীবন স্পর্শ কাতর
স্নিগ্ধতা স্পর্শ করো
স্নেহহীন সরসংকোচে ভালোবাসায়
ভরো।
জীবনের আনন্দময় উল্লাসে
সুখ অনুসন্ধানে নি:শব্দে
ভেসে
শুধু হোক স্পর্শ
No comments
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।