পাঠ পর্যালোচনা : ফারজানা করিম-এর গল্পগ্রন্থ ‘শূন্যতা’


উপহার জীবনের অমূল্য পাওয়া। এরপর একজন লেখকের নিজের সৃষ্টি তাঁর লেখা গল্পগ্রন্থ।তাঁর সন্তানতুল্য একটা সৃষ্টি।  লেখক ফারজানা করিমের কাছ থেকে যখন তাঁর গল্পগ্রন্থ উপহার পেলাম নিজেকে ধন্য মনে হলো।  এই মানুষটাকে চেনার আগে থেকেই তাঁর সৌন্দোর্যের জন্য সে আমার কাছে সবসময় খুব প্রিয়। একযুগ আগে ভিকারুননিসা নুন স্কূলে প্রথম যেদিন দেখা হলো কথা হলো তাঁকে আমার মনে হলো একটা পরী দেখছি। তখন তাঁকে চিনতাম চ্যানেল আইতে নিয়মিত সংবাদ পড়তেন। এরপর জানলাম তার লেখক স্বত্তার কথা। ঘরের পাশে পাঞ্জেরীতে বসে বসে পড়েছিলাম" মী" গল্পগ্রন্থ। ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় আছি সবসময় মানুষটাকে দেখতে ভালো লাগে। কখনো কখনো হয় না দেখেছি তো দেখতে দেখতে মন ভরে এবার উপচে পড়ার সময়। এই মানুষটাকে দেখে কখনো এমন মনে হয় না দেখার ইচ্ছে পূরণ হয় না। কোথায় যেন থেকেই যায় শূন্যতা। তাঁর শূন্যতা গল্পগ্রন্থটি হাতে পেয়ে ইচ্ছা পূর্ণ হলেও শূন্যতা অনুভব করলাম। এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম ফারজানা করিমের গল্পগ্রন্থ শূন্যতা। মনে হলো ছয়বার নতুন করে শূন্য হবার অনুভূতি আমাকে গ্রাস করলো। আর বলে গেল তাইতো পরিপূর্ণ জীবনে শূন্যতা একটা রহস্য সত্য। পরিপূর্ণ বলবো না শূন্যতা আমার বর্ণণায় থাকবে। নতুন করে শূন্য হতে পাঠকদের শূন্যতা পড়তে হবে।
 
প্রথম গল্প রাজকন্যা হারিয়ে যেও না পড়তে পড়তে নিজেকে অরণ্যের মাঝে বিলীন করে মলিন হয়েছি অনেকবার। দ্বিতীয় গল্প Happy Ending দরিদ্রতা জীবনকে কতবেশি কঠিন করে দেয়। আলোর মানুষ শুধু বেঁচে থাকার জন্য অন্ধকারে চলে যায় রূপার জীবনের গল্পটা এমনি। এরপরেও রূপার আরেকজনের জন্য ভালো চাইতে পারার শক্তি মুগ্ধ করেছে। তৃতীয় গল্প চোখের বাহিরে দুই ভাই বোনের অলৌকিক ভালোবাসার বন্ধন। আমরা অনেক কিছুই মানি না বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করাতে পারি না। তবুও একজনের অবিশ্বাস্য কোন মিথ্যাই আরেকজনের জীবনের অদৃশ্য সত্য। তমা আর রাকিব দুই ভাইবোনের গল্পটা এমন।
 
চতুর্থ গল্প সুধা।একটা স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় দাম্পত্য জীবন। সব নারী চায় মাতৃত্ব আর তার মাতৃত্ব নিয়ে ভালোবাসার বন্ধনের আয়োজন। সুধার গল্পে আমি নিজেই সুধার সাথে সত্যি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। সুধার শীতলতায় আমি খুব বিরক্ত হতাম যদি সুধা শেষ প্রতিবাদটুকু না করতো।পঞ্চম গল্প অদ্ভুত জীবন চমৎকার একটি গল্প সুতপার টিকে থাকার সংগ্রাম। শিক্ষকের প্রতি পবিত্র ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতার চমৎকার প্রকাশ। ষষ্ঠ আর শেষগল্প রোদ্দুর। মহিম আর নিকুঞ্জের দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন মান অভিমানের পর একটা শূণ্যতা পুরনের আশা নিয়ে যখন সামনে চলছি ঠিক তখন ভয়াবহ দুর্ঘটনা এতো বেশি শূন্য করে দিল। চোখের জলে শেষ করতে হয়েছে গল্পগ্রন্থটি। লেখকের লেখার গতি আর চমক আর পাঠকে ভাবনায় চলতে চলতে ভাসিয়ে ডুবিয়ে নেবার ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়েছি। পড়া শেষে ভাবছিলাম লেখক গল্পগুলোকে কতদিন ভেতরে ধারন করে লালন পালন করে লিখেছেন। আর আমি অবিবেচকের মত এক নিঃশ্বাসে বইটা শেষ করলাম। আর লেখকের লেখা এখানেই সার্থক আর সফল।আমি দ্রুত রিড়ার এটা একটা বিষয় আর লেখকের লেখার গতিময়তা রহস্যময় চিন্তার রাজ্যে ডুবিয়ে নেয়া লেখায় জমে গেছে আমার শূন্যতার সাথে কাটানো সময়।
 
ফারজানা করিমের লেখার হাত চমৎকার। ফেসবুকে তার মাকে নিয়ে লেখাগুলো অনেক মুগ্ধ করেছে আমাকে। তাঁর কবিতা অসাধারণ একেবারে তাঁর নিজেস্ব সৌন্দর্যের মতো সুন্দর। তাঁর কিছু ছোটগল্প আগেও পড়েছি। তাঁর সরাসরি আবৃত্তি আমাকে নতুন করে তাঁর ভক্ত করেছিল। তাঁর সম্পর্কে লিখতে শুরু করলে লেখা শেষ হবে না। তবে তাঁর এই শূন্যতা গল্পগ্রন্থটি আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সেই আচ্ছন্নতার মধ্যে থেকে আমি এর রিভিউ লিখলাম। আমি নিজেও লেখালেখির জগতের মানুষ। ফারজানা করিমের সাথে কোথাও না কোথাও একাত্মতা খুঁজে পাই। কবিতায় ,গল্পে আর লেখায়। শূন্যতা বইটিতে গল্পের প্রয়োজনে গল্পের ভেতরে এসে মিলেমিশে গেছে কয়েকটি কবিতা যা আমার হৃদয় ছুঁয়েছে।
 
ফারজানা করিমকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই। তাঁর গল্পগ্রন্থ শূন্যতা পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করবে সে প্রত্যাশা। নতুন গল্পগ্রন্থ পড়ার অপেক্ষায় থাকবো।
 
গল্পগ্রন্থ : শূন্যতা
লেখক : ফারজানা করিম
প্রকাশ : তাম্রলিপি
প্রচ্ছদ : ধ্রব এষ
মূল্য : ২০০ টাকা
 
লেখক : মেহবুবা হক রুমা
(কবি ও রম্যলেখক)
৬ মার্চ ২০২৩

No comments

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.